পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০১০

আমার কোড়কদি ১


আমরা থাকি উত্তর কলকাতার উপকন্ঠে বরানগরে।পৈতৃক বাড়ী ৯৭ বছর প্রাচীন।আমাদের ঘর থেকে বড় দালান যাওয়ার দরজার উপর আটকানো থাকতো আমার প্রপিতামহের আভিজাত্যপূর্ণ প্রতিকৃতি।অনেক ছোটবয়স থেকেই আমার বই পড়ার শখ।বিভিন্ন বইতে একটা কথা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করত।সেটা হল “দেশের বাড়ী”।নিতান্ত খেয়ালের বশে একদিন বড়দাদাই কে জিজ্ঞাসা করলাম “আমাদের দেশের বাড়ী কোথায়?”তিনি উত্তর দিলেন “ফরিদপুরের কোড়কদি গ্রাম”।বাংলাদেশের ফরিদপুর ১২ বছরের কিশোরের কাছে সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার।অতএব কথা আর এগোয়নি।
২০০৮  সাল।কলেজ স্ট্রীট এদে’জ এ কিছু বই কেনার সময় একটা বই আমার চোখে পড়ল।আনন্দনাথ রায় এর লেখা “ফরিদপুরের ইতিহাস”।বইটা ওল্টাতে ওল্টাতে ১২৬ পৃষ্ঠায় এসে আমার চোখ আটকে গেলা।“গ্রামের রায়বাহাদুর রাধিকামোহন লাহিড়ি আসাম-বেঙ্গল এর প্রথম ভারতীয় পোস্ট মাস্টার জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন।রাধিকামোহন ও বিনাদবিহারী লাহিড়ি ১৯০১ সালে যে বিদ্যালয়টি স্হাপন করেন,তার নাম আর বি হাইস্কুল”।
তখন থেকে কোড়কদির প্রতি আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে।এদিকে হাতে কোনও তথ্য নেই।ঝাঁপিয়ে পড়লাম বাড়িতে রাখা একটা কাঠের বাক্সে রাখা হলদেটে কাগজের স্তুপে।পেলাম একটা ছোটো ডায়েরি যাতে আমার ৬ পুরুষের বংশতালিকা রাখা আছে।ওটা হল প্রথম ধাপ।এরপর জনপ্রিয় নেটওয়ার্কিং সাইট অর্কুটে ওই তালিকাটা আমার মোবাইল নম্বর ও “কোড়কদির লাহিড়ীবাড়ির কেউ থাকলে যোগাযোগ করুন” মন্তব্যের সাথে পোষ্ট করলাম।
এর পরদিন এল রাজর্ষিদার ফোন। রাজর্ষি লাহিড়ী কোড়কদির ছোটো লাহিড়ীবাড়ীর উত্তরাধিকারী।এরপর চাকদহ নিবাসী অশোক লাহিড়ী মহাশয়ের সৌজন্যে খোঁজ পেলাম অবনী লাহিড়ীর লেখা “তিরিশ চল্লিশের বাংলা” বইটির।অশোককাকু আমাকে একদিন ওনার সংগ্রহে থাকা বইটি থেকে কোড়কদি সম্পর্কিত অধ্যায়গুলি পড়ে শুনিয়েছিলেন ফোনের মাধ্যমে।কাকু আপনাকে ভুলবো না।
২০১০ সাল। পরিচয় হল বাংলাদেশনিবাসী সুব্রত কুমার দাস মহাশয়ের সাথে।উনি ১০ বছর যাবৎ কোড়কদি নিয়ে গবেষণা করছেন।ওনার কাছে গ্রামের প্রচুর কৃতী ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারি।এখন কোথাও যেন কোড়কদির সাথে একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছি।
সুব্রতকাকু,আপনার উৎসাহে আমি কোড়কদি নিয়ে লেখা শুরু করছি।আপনি একটি বিশেষ কারণে আমার ছাল বাকলা তুলে দেবেন বলেছিলেন।সেই ঝুঁকি নিয়েও লিখতে বসলাম(হাঃ হাঃ)।কোনও ভুল হলে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার অনুমতিও আপনাকে দিয়ে দিলাম কারণ কোড়কদি আপনার বহু পরিশ্রমের ফল।তাকে নিয়ে খেলা করার অধিকার আমার নেই।

1 টি মন্তব্য: