পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ৯ মে, ২০১১

আমাদের রবীন্দ্রনাথ

 

রবীন্দ্রনাথ আমাদের কে? একটা সময় এই প্রশ্নটা বারবার মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতো। ছোটোবেলা থেকেই দোতলার বারান্দায় তাঁর একটি ছবি টাঙানো থাকতে দেখতাম। পরে শুনেছিলাম ওটি আমার পিতামহের আমলের। খুবই অদ্ভুত লাগতো, একজন সম্পুর্ণ অচেনা ব্যাক্তি যার সাথে আমাদের পরিবার এর কোনও সম্পর্ক নেই, তার ছবি কিভাবে এত যত্ন সহকারে এতদিন ধরে (পিতামহের  মৃত্যু ১৯৪৮ সালে) রাখা আছে। ছবির নিচে পিতামহের হস্তাক্ষ্যরে কবির একটি গানের দুটি লাইন আমার মনে আছে।

“নয়ন সমুখে তুমি নাই
  নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই”

বড় হওয়ার পর কথাটার মানে বুঝতে পারলাম। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে প্রতিটি জীবের দেহ নশ্বর। কবিরাও এর ব্যাতিক্রম নন। কিন্তু কখনও কখনও জীবের সৃষ্টি এই নিয়ম কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অমরত্ব লাভে সক্ষম হয়। সমগ্র বিশ্বে অল্পসংখ্যক কিছু মানুষ এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী। রবীন্দ্রনাথ তাঁদের মধ্যে অন্যতম, সম্ভবত তাঁদের থেকে কিছু বেশী।

রবীন্দ্রনাথ এমন একজন মনিষী যিনি শুধুমাত্র তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়ে বিখ্যাত নন। সুদূর পাঞ্জাব এর জালিয়ানওয়ালাবাগ কাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ত্যাগ করেন তাঁর নাইটহুড, বৈদিক তপোবন এর ন্যায় শান্তিনিকেতনে গড়ে তোলেন ব্রহ্মচর্‍যাশ্রম, বীরভূম জেলার গরিব মানুষদের স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে তাদের কুটিরশিল্পের শিক্ষ্যা দেন। শান্তিনিকেতন আজও সমগ্র বিশ্বের কাছে ভারতবর্ষের গর্ব। সেখানে আমাদের দেশের সাথে সাথে জার্মানি, জাপান চীন ও আরও বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয় এর পাঠ নিতে আসে। বীরভূম এর লাল মাটি হয়ে ওঠে বিশ্বসংষ্কৃতির মিলনক্ষেত্র।

 

tagore_1890_london

এবার আসা যাক তাঁর সাহিত্যপ্রসঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ সারাজীবনে লিখে গেছেন উপন্যাস, কবিতা, গান, নাটক, ছোটগল্প, রম্যরচনা, প্রবন্ধ। এমনকি তাঁর লেখা চিঠিপত্রও সাহিত্যিক গুণমানে মণি মানিক্যের সমান। আজ  তাঁর মৃত্যুর ৭০ বছর পরও তাঁর সৃষ্টি অমলিন। আজও রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়া কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ভাবাই যায় না। আজও কোনও শিল্পীর মাপকাঠি হল রবীন্দ্রসঙ্গীতে তাঁর পারদর্শীতা। অবাক হয়ে যাই যখন দেখি আমার ৩ বছর বয়সী বোন রবীন্দ্রসঙ্গীত এর তালে তালে নেচে ওঠে।
আমার বুক গর্বে ভরে ওঠে যখন দেখি ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারত ও বাংলাদেশ এর খেলোয়াড়রা একই কবির লেখা জাতীয়সঙ্গীত গেয়ে ওঠেন।
তাঁর মৃত্যুর এত বছর পরেও তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা নিয়ে রাজনীতিকরা প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন।

অতএব রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনের সাথে মিশে গেছেন, আজ তাঁকে আমরা চাইলেও অস্বীকার করতে পারিনা। সম্ভবত আজ থেকে কয়েকশত বছর পরেও হয়ত পারব না। আজ বুঝতে পারি রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও রবীন্দ্রনাথ ধর্ম-শ্রেণী নির্বিশেষে সকল বাঙালির আত্মীয়।
তাই রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন

                           
     ”সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি
                                  কে বলেগো সেই প্রভাতে নেই আমি”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন